আনোয়ার জাহিদ: ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই, বন্যার আশংঙ্কা। তলিয়ে গেছে কমপক্ষে পাঁচহাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত।
এর মধ্যে চরভদ্রাসন,সদরপুর,ও ফরিদপুর সদর উপজেলার বাদাম চাষিরা উল্লেখিত, পরিমান জমির বাদামের ফসল সময় মত ঘরে তুলতে না পেড়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
চাষিদের বক্তব্য, যে পরিমান বাদাম ক্ষেতে আসছে তার অর্ধেক পচে গেছে টানা ১০/১২ দিনের বৃষ্টিতে। সামান্য কিছু বাদাম আছে শুধু ছেলে মেয় এবং ঘরে খাবার জন্য।
ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন,সদরপুরসহ তিনটি উপজেলার চড়ের বাদাম চাষি ইয়াকুব,মনির মোহন,শমশের এ প্রতিবেদককে জানান,,বাদামের ক্ষেত পঁচে ও ডুবে যাওয়ায় আমরা চরম জ্বালানি সংকটে ও পড়ে গেলাম।
চারিদিকে, ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার আতঙ্ক। কেই ফসলের মাঠ রক্ষায় বিজি,কেউ গো- খাদ্য মজুদ করতে বিজি।কেউবা বাদামের ক্ষেত বাঁচাতে কামলাদের হাতে পায়ে ধরছে।
তলিয়ে যাচ্ছে ঢেঁরশ ক্ষেত,লাল শাঁক,ডাটা,কুমড়া ক্ষেত,কলমি শাখের ক্ষেত। বিশেষ করে গরু বাচুর ও ঘোরার খাবার হিসেবে যে সকল ঘাঁসের আবাদ করা হয়েছিল তা প্রায় ৬০% পানির নিচে ডুবে গেছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) ফরিদপুর গোলডাঙ্গী এলাকায় সরেজমিনে দেখাযায়, চারটি খেয়াঘাটের ৪৫ ভাগ অংশ পানি প্রায় ছুঁই ছুঁই। তার অগ্রভাগে তলিয়ে গেছে পাঁচশত বিঘা পরিমান বিশাল একটি ফসলের চড়।
উজানের ভারী বর্ষণে পদ্মার পানি বেশী পরিমানে বাড়ছে। বন্যার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে পদ্মাপারের মানুষ। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সেই সাথে হু হু করে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। প্রতিদিন জেলা সদরের দুটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০/১২ টি গ্রাম প্রায় ডুবে গেছে।
তিন উপজেলায় ডুবে গেছে কমপক্ষে পাঁচহাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত। তলিয়ে চড়ে গো- খাবারের ঘাঁসের ক্ষেত। একদিকে বন্যা।মাথার উপর বৃষ্টি। প্রচন্ড গরম,সাথে ভ্যাপসা আবহাওয়া মানুষের জনজীবনেও নেমে আসছে এক দূর্বিসহ অবস্থা।
জেলার অর্থনীতিতে নামছে ধ্বস। সামাজিক ভাবে চলছে কম বেশী হানাহানিরাজনৈতিক দাঙ্গামা ও অসৌজন্যমূলক বৈরী আচারন। মোট কথা পদ্মার বেড়ে উঠা পানিতে ডাকছে বন্যা। উজানের ধেয়ে আসা পানিতে প্রতিদিন ডুবছে নতুন চড়।ডুবছে গো- খাদ্যের ঘাঁসের ক্ষেত।ডুবছে নানান ধরনের শাক-সবজির ক্ষেত। পানিতে ডুবে অচল হয়ে পড়ছে চাঞ্চলের গরীব চাষিদের পায়ে হাটার পথটুকুও।
তকুয়ে গেছে জনচলাচলের চড়ের নিচু অংশ এবং ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেলের পথ। ঘোড়ার গাড়ি করে মাল টানা পথ,কৃষাণীদের গরু ছাগলে পালনের গো- খাদ্যেরও চরম অভাব দেখা দেওয়াসহ পুরো চড় জুড়ে এখন ম্যাচাকার অবস্থা।
বাজার মূল্যে দুশ্চিন্তায় ভুগছে গরীব অসহায় কৃষকরা।
বুধবার (২৩ জুলাই), সকাল ৬টায় পদ্মার ভাগ্যকুল পয়েন্ট। আরিচা পয়েন্ট। দাশুরিয়া পয়েন্ট।গোয়ালন্দ পয়েন্ট। হাজীগঞ্জ পয়েন্ট। শয়তান খালি পয়েন্ট। কবিরপুর পয়েন্ট।কামারডাঙ্গি পয়েন্এ এবং ফরিদপুর নদীবন্দর ঘাট পয়েন্টের পদ্মার পানি বিপদসীমা একটু নিচে অবস্হান করছেন বলে উল্লেখিত, পয়েন্ট গুলোর পাউবোর ওয়াডার লেবেলম্যান রাইটারটার এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করছেন।
উল্লেখিত, পয়েন্টগুলোতে পদ্মার পানি প্রবাহের গতি ছিল আগের তুলনায় পাঁচগুন। পাশাপাশি
গতকাল বুধবার, পদ্মার পানি ছিল ৪৮- ৪৯- ৫০-৫১- দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর বিপৎসীমার ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
পদ্মার নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কয়েক দিন ধরে উজানের তথা ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানি কুষ্টিয়া পাবনা হয়ে ফরিদপুর অঞ্চলে ও ডুকে পড়ছে। এ কারণে উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানি। ফলে পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে পাঁচগুন।
ফলে পদ্মা নদীর তীরবর্তী চড়গুলো প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ । ডুবে গেছে চরভদ্রাসনের চরাঞ্চলের খেয়াঘাট। কবিরপুর খেয়াঘাট।৩৮ দাগ খেয়াঘাট। মোহনের হাট এলাকা। অপরদিকে, চরভদ্রাসনের চরাঞ্চলের সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাশংই।যোগাযোগের মাধ্যমই এখন অচল।
এমনটাই ইনকিলাব কে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চড় এলাকার ভুক্তভোগীরা।
এই বিষয়ে এ প্রতিবেদককের সাথে কথা হয়, ফরিদপুর নৌবন্দর ঘাটের, ঘাট সর্দার মোঃ শাহিনের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে চরভদ্রাসন হরিরামপুর, আকটেরচড়,সদরপুরের শয়তানখালী, মুন্সীরচড়, আকোট,এলাকার ভাটি অঞ্চল, ভাঙ্গা উপজেলার চান্দা এলাকা,কালামৃধা আঁড়িয়াল খাঁর চড়,আড়িয়াল খাঁ এলাকা,
চরভদ্রসনের হাজীগঞ্জ, ফরিদপুর সদর থানার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ১-২ ৫-৬ -৭ নং ওয়ার্ড, এবং ডিক্রিচড় ইউনিয়নের মদনখালী,ধলারমোড়,সিএন্ডবিঘাট,ভুঁইয়া বাড়ির ঘাট, ফরিদপুর অংশের খেয়াঘাট, বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেলে পদ্মাপাড়ের মানুষের কষ্টের কোন শেষ থাকবে না। পাশাপাশি চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে অভাব অটন। গো- খাদ্যেরও চরম সংকট দেখাদিবে।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির খবরে নদীপারে বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষজন উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। পাশাপাশি যারা গরু বাচুর, ছাগল, বেড়া ও গোড়া পালন করছেন সে সব গৃহস্হরা পড়বে মহাবিপদে।
ফরিদপুরে বন্যা হলে শত শত একর ফসলের মাঠ তলিয়ে গেলে কমপক্ষে চার পাঁচ হাজার নারী- পরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।
পদ্মাপাড়ের মানুষেরা ইনকিকালবকে বলছেন বিপৎসীমা অতিক্রম করার আগেই বন্যাকবলিত হয় ফরিদপুর,চরভদ্রাসন,সদরপুর,ভাঙ্গা চরাঞ্চলগুলো।
এসব অঞ্চলের মানুষ ঘরবাড়ি ও গবাদিপশু নিয়ে শত শত গৃহস্হ চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।
পদ্মা নদী এলাকার বাসিন্দা মোঃ আবুল কালাম আজদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা নদীপাড়ের মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকি।
বান,জোয়ার, বৃষ্টি, খরা,রোদ ও নদী ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের জীবন অতিবাহিত হয়। বিশেষ করে ভারতের উজানে যে গেট রয়েছে তার নাম গজলডোবাসেগুলো যখন খুলে দেয় তখন আমরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই।
এই গেটগুলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। খরা মৌসুমে গেটটি বন্ধ রাখা হয় আর বর্ষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় ভারত।
তখন পুরোপুরি আমরা ডুবে মরি। খাদ্যের অভাবে মারা যায় গরু,বাচুর ও ছাগল এবং ঘোড়া।
বয়স ৭০ হবে, নাম কোবাদ আলী তিনি ইনকিলাবকে বলেন,আমি ৫০-৬০ বছর যাবৎ দেখছি ফরিদপুর অঞ্চলে বৃষ্টির পানিতে তেমন বন্যা হয় না, বন্যা হয় ভারতের উজানের পানিতে।
তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচাজ নুরুল ইসলাম ইনকিলাব কে জানান, তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪
গেট খুলে রাখা হয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানইনকিলাবকে বলেন,উজানের ধেয়ে আসা পানিই আমাদের দক্ষিণ ও উওরাঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পানির হুমকি।
অপরদিকে, এ প্রতিবেদককের সাথে কথা, ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশল মোঃ রাকিব হোসেনের সাথে, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বন্যা হলো একটি জাতীয় সমস্যা। প্রকৃতি অনুলে থাকা ও না থাকা নির্ভর করে উজানের পানির উপর।